রমজান মাস আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ধৈর্যের মাস। তবে দীর্ঘ সময় না খাওয়া ও পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যা সরাসরি ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ব্রণ দেখা দেয় এবং ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই রমজানে ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই ব্লগে আমরা শেয়ার করবো ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখার কার্যকরী স্কিনকেয়ার টিপস, যা বাংলাদেশের জলবায়ু ও জীবনযাত্রার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে।
রমজানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, পানি পান করার পরিমাণ এবং ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আসে, যা ত্বকের আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় পানির অভাব, অনিয়মিত ঘুম, এবং ভাজাপোড়া ও তেলাক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ব্রণ, রুক্ষতা ও কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জাপানের বিজ্ঞানী ডা. ইয়োশিনোরি ওহশুমি তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে রোজা রাখার মাধ্যমে দেহের কোষে "Autophagy" প্রক্রিয়া চালু হয়, যা বর্জ্য ও দূষিত কোষ ধ্বংস করে ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
সমস্যা
কম পানি পান করার ফলে ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস পায়।
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
সমাধান:
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন (ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত)।
ডাবের পানি, শসা, তরমুজ ও দই বেশি খান।
অ্যালোভেরা জেল বা হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সমস্যা:
বেশি তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার খেলে ত্বক অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে।
লোমকূপ বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস দেখা দেয়।
সমাধান:
ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (বাদাম, মাছ, অলিভ অয়েল) খান।
টি-ট্রি অয়েল বা অ্যালোভেরা জেল ব্রণের ওপর ব্যবহার করুন।
অয়েল-ফ্রি ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে অন্তত ২ বার মুখ পরিষ্কার করুন।
সমস্যা:
ঘুম কম হওয়ায় চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে।
শরীরে পানিশূন্যতার কারণে চোখের চারপাশের ত্বক নিস্তেজ হয়ে যায়।
সমাধান:
প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
শসার রস, টি ব্যাগ বা ঠান্ডা দুধ চোখের ওপর ব্যবহার করুন।
ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ আই ক্রিম বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন।
রমজানে ত্বক সুস্থ রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি পান করা। ইফতার থেকে সেহরির মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং চা, কফি ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীর থেকে পানি শোষণ করে নেয়।
রমজানে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে,
যেমন:
রমজানে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV Rays) ত্বক কালো করে দিতে পারে, তাই বাইরে যাওয়ার আগে এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি, ভালো মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
ঘুমের অভাবে ত্বক নিস্তেজ ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
শসা ও গোলাপজল: ত্বক শীতল ও আর্দ্র রাখে।
হলুদ ও দই: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
মধু: প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
অ্যালোভেরা: ত্বক ঠাণ্ডা রাখে ও ইনফ্ল্যামেশন কমায়।
তুলসি পাতা: ব্রণ ও ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন দূর করে।
বাংলাদেশের বাজারে রমজানের জন্য কিছু কার্যকরী স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, যেমন:
রমজান মাসে, ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকা - বিরতিহীন উপবাসের অভ্যাস শরীর এবং ত্বক উভয়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা ব্রণের রোগবিদ্যার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জারণ অবস্থা অন্তর্ভুক্ত
যখন আপনি রোজা রাখেন, তখন আপনার শরীরের হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হয়, যা অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের কারণ হতে পারে, যার ফলে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্রণ দেখা দেয়। রমজান মাসে অপর্যাপ্ত জল গ্রহণের কারণে পানিশূন্যতাও ব্রণ তৈরিতে অবদান রাখতে পারে। ব্রণ বৃদ্ধি মানসিক চাপ এবং ক্লান্তির ফলে হতে পারে।
স্কিন ফাস্টিং কি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে? হ্যাঁ, এটা পারে ! অতিরিক্ত পণ্য ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বককে পুনঃসংশোধন করার সুযোগ দিয়ে এবং জ্বালাপোড়া কমিয়ে, আপনি উন্নত টেক্সচার, হ্রাস সংবেদনশীলতা এবং একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করতে পারেন। তবে, কার্যকারিতা আপনার ত্বকের ধরণ এবং সামগ্রিক ত্বকের যত্নের অভ্যাসের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
ক্যাফেইন এবং ধূমপান পরিহার করুন : ক্যাফেইন এবং ধূমপান উভয়ই আপনার শরীর এবং ঠোঁটকে পানিশূন্য করতে পারে। বিশেষ করে রমজান মাসে আপনার গ্রহণ কমানোর কথা বিবেচনা করুন। রাতের বেলায় উপশমের জন্য হিউমিডিফায়ার: রাতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করতে পারে, ঘুমানোর সময় ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু ডাঃ শাহ বলেন যে আপনি রোজা রাখার সময়ও আপনার স্বাভাবিক পণ্য ব্যবহার করতে পারেন । "একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে যে আপনি যখন রোজা রাখেন তখন আপনার ঐতিহ্যবাহী ত্বকের যত্নের পণ্য ব্যবহার করতে পারবেন না," তিনি বলেন। "আমি মনে করি আপনি রোজা রাখার সময়ও আপনার ক্লাসিক ময়েশ্চারাইজার এবং সান ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন
উপসংহার
রমজানে ত্বকের সঠিক যত্ন নিলে ব্রণ, পানিশূন্যতা ও ক্লান্তির ছাপ এড়ানো সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে রোজার সময়ও ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
Was this post helpful?
0
0