পছন্দের পোশাক আর সুন্দর সাজে তৈরি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর পর যদি দেখেন, চুল ফ্রিজি, রুক্ষ আর নিয়ন্ত্রণহীন, তাহলে আপনার মুড নিশ্চয়ই খারাপ হয়ে যায়। চুল এমন অবস্থায় থাকলে স্টাইল করা কঠিন হয়ে পড়ে। চুল খোলা রাখাও কষ্টকর হয়ে ওঠে, আর কোনো স্টাইল করলেও তা মানানসই মনে হয় না। এই অবস্থায় চুল ম্যানেজেবল এবং ঝলমলে করতে রিবন্ডিং এবং কেরাটিন ট্রিটমেন্ট হতে পারে আপনার জন্য একটি সমাধান।
অনেকেই রিবন্ডিং এবং কেরাটিন ট্রিটমেন্টের (Keratin Treatment) মধ্যে পার্থক্য জানেন না, ফলে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয় কোনটি চুলের জন্য বেশি উপযোগী। আজ আমরা এই দু'টি ট্রিটমেন্টের পার্থক্য এবং কোনটি আপনার জন্য সঠিক, তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করব।
রিবন্ডিং চুলের একটি কসমেটিক ট্রিটমেন্ট, যা চুলকে স্থায়ীভাবে সোজা, মসৃণ এবং চকচকে করার জন্য করা হয়। এটি মূলত রাসায়নিক এবং তাপ ব্যবহার করে চুলের প্রাকৃতিক গঠন পরিবর্তন করে। যাদের চুল স্বাভাবিকভাবে কোঁকড়া, ঢেউ খেলানো বা রুক্ষ, তারা চুলকে সোজা এবং ঝকঝকে করতে রিবন্ডিং করে থাকেন।
রিবন্ডিং এবং কেরাটিন ট্রিটমেন্টের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ পার্থক্য করতে পারেন না, কারণ উভয় প্রক্রিয়াতেই চুল স্ট্রেইট, স্মুথ এবং ম্যানেজেবল হয়ে ওঠে। তবে এই দু'টির প্রক্রিয়া একেবারেই আলাদা। রিবন্ডিং চুলের প্রাকৃতিক গঠন স্থায়ীভাবে বদলে দেয়, যেখানে কেরাটিন শুধুমাত্র চুলের পুষ্টি যোগায় এবং ম্যানেজেবল করে।
রিবন্ডিং হলো একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যেখানে চুলের প্রাকৃতিক টেক্সচার বদলে দেওয়া হয়। প্রথমে বিশেষ কেমিক্যাল, যেমন ফরম্যালডিহাইড বা অ্যালডিহাইড ব্যবহার করে চুলের অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রাকৃতিক বন্ড ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর হিট আয়রন এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করে চুলে নতুন টেক্সচার তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে চুল পুরোপুরি ঝলমলে স্ট্রেইট ও হয়ে ওঠে।
চুল রিবন্ডিং একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা সাধারণত ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় নেয়। তবে চুলের দৈর্ঘ্য, ঘনত্ব এবং সেলুনের কর্মীদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে সময় কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
রিবন্ডিংয়ের একটি বড় সুবিধা হলো এটি দীর্ঘস্থায়ী। একবার রিবন্ডিং করালে কয়েক মাস ধরে চুল ফ্রিজ ফ্রি ও স্ট্রেইট থাকে। তবে, নতুন চুল গজানোর কারণে সময়ে সময়ে রিটাচ প্রয়োজন হয়। এছাড়া, এই পদ্ধতিটি তুলনামূলক কম সময়সাপেক্ষ এবং কম মেইনটেনেন্সের প্রয়োজন হয়।
একবার করালে চুল ৬-৮ মাস পর্যন্ত স্ট্রেইট এবং ফ্রিজ ফ্রি থাকে।
প্রতিদিন চুল স্ট্রেইট করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চুলে ঝলমলে এবং সিল্কি লুক আসে।
চুলের প্রাকৃতিক গঠন বদলে যাওয়ায় এটি হেয়ার ফলিকল দুর্বল করে তুলতে পারে।
নতুন চুল গজানোর পর রিটাচ করাতে হয়।
রুক্ষ এবং ড্যামেজড চুলে রিবন্ডিং করলে চুল ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
রিবন্ডিংয়ের খরচ সেলুনের মান, ব্যবহৃত পণ্য এবং আপনার চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, খরচ ১,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চমানের পণ্য ও সেলুনে খরচ বেশি হতে পারে।
কেরাটিন হলো একটি প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা চুলে বিদ্যমান থাকে এবং চুলের গঠনে সাহায্য করে। তবে সান এক্সপোজার, ব্লিচিং এবং কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহারের কারণে চুলে কেরাটিনের ঘাটতি হতে পারে।
সেলুনের মান, চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে কেরাটিন ট্রিটমেন্টের খরচ সাধারণত ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কেরাটিন ট্রিটমেন্ট চুলের ঘাটতি পূরণ করে এবং এটি আরও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ম্যানেজেবল করে। এই প্রক্রিয়ায় চুলের প্রাকৃতিক টেক্সচার অপরিবর্তিত থাকে এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড বন্ডগুলো আগের মতোই থাকে। কেরাটিন ইনফিউশন চুলকে শক্তিশালী ও মসৃণ করে, যা চুলকে রুক্ষতা এবং ফ্রিজ থেকে রক্ষা করে।
চুল মসৃণ, সফট এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়।
প্রাকৃতিক গঠন পরিবর্তন না করে চুলের ফ্রিজ কমানো হয়।
এটি চুলকে হিট ড্যামেজ এবং পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
কেরাটিন ট্রিটমেন্টের ফলাফল ৩-৪ মাস স্থায়ী হয়।
তুলনামূলক বেশি খরচ প্রয়োজন।
হেয়ার কেয়ার রুটিনে বেশি সময় ও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
ট্রিটমেন্টের পর প্রথম ২-৩ দিন চুল ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন এবং গরম পানি এড়িয়ে চলুন। চুল শক্ত করে বাঁধবেন না এবং হেয়ার ড্রায়ার বা স্ট্রেটনার কম ব্যবহার করুন
আপনার চুলের ধরন, সমস্যা এবং দৈনন্দিন রুটিনের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি আপনার চুল ঘন, কার্লি বা ওয়েভি হয় এবং ড্যামেজ কম থাকে, তবে রিবন্ডিং হতে পারে সেরা পছন্দ। এটি চুলকে একদম স্ট্রেইট করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে চুল ম্যানেজেবল রাখে।
অন্যদিকে, যদি চুল পাতলা, রুক্ষ বা ফ্রিজি হয়, এবং আপনি প্রাকৃতিক টেক্সচার বজায় রেখে মসৃণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল চান, তবে কেরাটিন ট্রিটমেন্টই সেরা বিকল্প। এটি চুলে প্রোটিন যোগ করে এবং প্রোটেকশন ব্যারিয়ার তৈরি করে, যা চুলকে আরও শক্তিশালী ও চকচকে করে।
রিবন্ডিং তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং এর ফলাফল প্রায় ছয় থেকে আট মাস স্থায়ী হয়। কেরাটিন ট্রিটমেন্টের খরচ বেশি, তবে এর স্থায়ীত্ব তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত। তাই যদি আপনার বাজেট কম হয়, তাহলে রিবন্ডিং সেরা বিকল্প হতে পারে।
রিবন্ডিং করার পর চুলের যত্ন নেওয়া তুলনামূলক সহজ। কেবল সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন এবং চুলে তেল লাগান।
কেরাটিনের পর চুলের যত্নে বেশি সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নিয়মিত ডিপ কন্ডিশনিং করতে হয় এবং চুলকে অতিরিক্ত হিট থেকে রক্ষা করতে হয়।
রিবন্ডিংয়ে ব্যবহৃত ফরম্যালডিহাইডের মতো কেমিক্যাল চুলের প্রাকৃতিক প্রোটিন ভেঙে দেয়, যা চুলকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করতে পারে। কেরাটিন ট্রিটমেন্টে কম ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার হয়, তবে কিছু পণ্যতে ফরম্যালডিহাইড থাকতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই, যে ট্রিটমেন্টই বেছে নিন না কেন, পেশাদার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং অথেনটিক বিউটি পণ্য ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য — যদি একদম স্ট্রেইট এবং স্থায়ী লুক চান, তবে রিবন্ডিং আপনার জন্য সেরা। তবে, চুলের স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখে মসৃণতা পেতে চাইলে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট বেছে নিন।
যে পদ্ধতিই বেছে নিন না কেন, অভিজ্ঞ বিউটি স্যালনে এটি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ অদক্ষ হাতে এই ট্রিটমেন্ট করলে চুল স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং আপনার চুলকে দিন দীর্ঘস্থায়ী সৌন্দর্যের পরিচর্যা।
Was this post helpful?
0
0