ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal Infection) হলো এক ধরনের সংক্রমণ যা ফাঙ্গাস বা ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হয়। প্রায় ৫০ হাজারের মতো ছত্রাক রয়েছে তবে এর মধ্যে ২০-২৫ রকমের প্রজাতির দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হয়। যেমন:- রিংওয়ার্ম (Ringworm), অ্যাথলিট'স ফুট (Athlete's Foot), জক ইচ (Jock Itch), ইয়েস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection), অনাইকোমাইকোসিস (Onychomycosis), টিনিয়া ক্যাপিটিস (Tinea Capitis), টিনিয়া কর্পোরিস (Tinea Corporis), টিনিয়া ভারসিকালার (Tinea Versicolor), টিনিয়া পিডিস (Tinea Pedis), ক্রিপ্টো ককোসিস (Cryptococcosis) ইত্যাদি। এই ইনফেকশন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে তন্মধ্যে অন্যতম হলো ত্বক, নখ, এবং চুল। চলুন ফাংগাল ইনফেকশন হলে করণীয় কি সেটা জেনে নেই।
ফাংগাল ইনফেকশন ফাংগাস (যা ছত্রাক নামে পরিচিত) জিবাণু দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ৷ এটি একটি মাইক্রোস্কোপিক জীবাণু, যা সাধারণত উষ্ণ এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বৃদ্ধি পায়। এর ধরন এবং লক্ষণগুলো নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ পায়:-
কান্ডিডিয়াসিস: এটি মুখ, গলা বা জিনিটাল অংশে হয়।
রিংওয়ার্ম: এটি ত্বকে গোলাকার লাল দাগ সৃষ্টি করে।
অ্যাথলেট'স ফুট: এটি পায়ের ত্বকে হয় এবং চুলকানি ও ফোঁড়া সৃষ্টি করে।
জক ইচ: এটি জিনিটাল অঞ্চলে হয় এবং চুলকানি ও লালচে দাগ সৃষ্টি করে।
অনিখোমাইকোসিস: এটি নখে হয় এবং নখের রং পরিবর্তন ও দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে পুঁজ জমে যেতে পারে।
আপনি যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দেখতে পাবেন।
বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে। তবে নিচের কারণগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ছত্রাক যাতে শরীরে আর বৃদ্ধি না পায় এজন্য শরীরের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিচে কিছু টিপস শেয়ার করা হলো:-
ফাংগাল ইনফেকশনের চিকিৎসার জন্য সাধারণত টপিকাল অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম, লোশন বা জেল ব্যবহৃত হয়। ওরাল অ্যান্টিফাংগাল ট্যাবলেটও ডাক্তারের পরামর্শমত গ্রহণ করতে পারেন।
ছত্রাক যেহেতু স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ পছন্দ করে তাই আক্রান্ত স্থান সবসময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে হবে এবং সংক্রমণস্থল ঘষাঘষি বা খোঁচাখুঁচি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এমন পোশাক চ্যুজ করুন যেন সেটা ঢিলাঢালা এবং সুতি কাপড় হয়। কারণ সুতি কাপড় পড়তে যেমন কম্ফোর্টেবল তেমন ত্বকের ভেতর বাতাস ইজিলি ঢুকতে পারে ফল ত্বকে ঘাম জমতে পারে না। তাই স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন।
কিছু জিনিস একান্তই নিজের ব্যক্তিগত হওয়া উচিত। যেমনঃ হেডফোন, তোয়ালে, চিরুনি, নেইল কাটার, জুতা ইত্যাদি ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না।
ন্যাচারালি এটি প্রিভেন্ট করতে চাইলে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন টি ট্রি অয়েল, রসুন, বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এগুলোর প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
বিশেষ করে যারা অ্যাথলেট'স তাদের ফুটের ক্ষেত্রে, পা সবসময় শুকনো রাখা উচিৎ। সুতি মোজা ব্যবহার করুন এবং প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করুন। এছাড়াও কোনো স্থানেই খালি পায়ে হাঁটবেন না, যেমন সাঁতার কাটা পুল বা জিম।
আক্রান্ত স্থানে ব্যবহৃত সরঞ্জাম যেমন নখ কাটার যন্ত্র, চিরুনি ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন। আক্রান্ত রোগীর নেইল কাটার, চিরুনি এবং ক্যাচার আলাদা করে রাখুন এবং অন্যের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
ঘামে ভেজা পোশাক বেশিক্ষণ ধরে পরিধান করবেন না। শরীরের ভাঁজযুক্ত অংশগুলো সবসময় শুকনো রাখন। যদি ঘাম অতিরিক্ত হয় তাহলে অ্যান্টিফাংগাল পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ফাংগাল ইনফেকশন যেমন ক্যান্ডিডিয়াসিসের ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিরাপত্তা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, ইনফেকশন যদি খুবই মারাত্মক হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
ফাংগাল ইনফেকশনের জন্য কিছু সাধারণ ঔষধ নিম্নলিখিতভাবে ব্যবহার করা হয়:
এগুলো হলো ক্রিম যা এক্সটার্নাল ত্বকে ব্যবহার করা হয়। যেমন:-
ক্লোট্রিমাজল (Clotrimazole): এটি রিংওয়ার্ম, অ্যাথলেট'স ফুট এবং অন্যান্য ত্বকের সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মাইকোনাজল (Miconazole): এটি ত্বকের বিভিন্ন ফাংগাল ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
টেরবিনাফাইন (Terbinafine): এটি ত্বক এবং নখের ফাংগাল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কেটোকোনাজল (Ketoconazole): ব্র্যান্ড নাম যেমন নিজরাল (Nizoral)।
এক্সিকোনাজল (Econazole): ব্র্যান্ড নাম যেমন স্পেকটাজল (Spectazole)।
বুটেনাফাইন (Butenafine): ব্র্যান্ড নাম যেমন লোট্রিমিন আল্ট্রা (Lotrimin Ultra)।
তিওকোনাজল (Tioconazole): ব্র্যান্ড নাম যেমন ভাগিসিল (Vagisil)।
নাটামাইসিন (Natamycin): এটি সাধারণত চোখের ফাংগাল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বেটামেথাসোন (Betamethasone): তীব্র চুলকানি ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত অন্যান্য অ্যান্টিফাংগাল ক্রিমের সাথে মিশ্রিত থাকে। দিনে এক থেকে দুইবার প্রয়োগ করা হয়।
নিওমাইসিন (Neomycin): ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং প্রায়ই ফাংগাল সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিফাংগাল ক্রিমের সাথে মিশ্রিত থাকে। দিনে দুই থেকে তিনবার প্রয়োগ করা হয়। বেটামেথাসন ও নিওমাইসিন সমৃদ্ধ একটি ক্রিম হলো Bantovet-n-cream.
ইকোনাজোল নাইট্রেট (Econazole Nitrate): বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ফাংগাল ইনফেকশনের জন্য। এটি রিংওয়ার্ম, অ্যাথলেট'স ফুট, এবং জক ইচ এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইকোনাজল নাইট্রেট সমৃদ্ধ একটি টপিকাল ক্রিম হলো Fungison Cream.
ব্যবহার বিধি: দিনে দুইবার আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।
বিঃদ্রঃ একজন রেজিস্ট্রার ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ প্রয়োগ করুন।
যখন ফাংগাল সংক্রমণ গুরুতর হয়ে যায় তখন ওরাল ঔষধ খাওয়া হয়। যেমন:
ফ্লুকোনাজল (Fluconazole): এটি ক্যান্ডিডিয়াসিস এবং অন্যান্য ফাংগাল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইট্রাকোনাজল (Itraconazole): এটি বিভিন্ন প্রকারের ফাংগাল ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
টেরবিনাফাইন (Terbinafine): এটি গুরুতর ত্বক এবং নখের সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ভালো। তাই চলুন প্রতিরোধ কিভাবে করবো দেখে নেই।
প্রতিদিন গোসল করুন এবং ত্বক ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। ঘাম বেশি হলে নিয়মিত কাপড় পরিবর্তন করুন।
শরীরের ভাঁজযুক্ত অংশগুলি (যেমন বগল, কুঁচকি) সবসময় শুষ্ক রাখুন। এজন্য ফাংগাল প্রতিরোধক পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
ঢিলাঢালা ও সুতি কাপড় পরিধান করুন। ভেজা পোশাক দীর্ঘ সময় ধরে পরিধান করবেন না।
তোয়ালে, চিরুনি, মোজা ইত্যাদি অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না।
পায়ের ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধে খোলা বা বাতাস চলাচলকারী জুতা পরিধান করুন। নিয়মিত জুতা পরিষ্কার এবং শুকিয়ে নিন।
পাবলিক পুল, জিম বা স্নানঘরে খালি পায়ে হাঁটবেন না। স্যান্ডেল বা ফ্লিপ-ফ্লপ ব্যবহার করুন।
টি ট্রি অয়েল, রসুন বা অন্য প্রাকৃতিক অ্যান্টিফাংগাল উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।
লাইফস্টাইল সুন্দর করুন। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন।
উপরিউক্ত টিপসগুলো মেনে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ফাংগাল ইনফেকশন দূর করা সম্ভব।
0
0