২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম শনাক্ত হওয়া HMPV সম্প্রতি চীনে ছড়িয়ে পরেছে। সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে বা দূষিত বস্তু স্পর্শ করার মাধ্যমে HMPV ছড়ায়। চীনে HMPV ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে কোভিডের মতো আরেকটি মহামারির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতংক বারছে। বাংলাদেশেও আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। তবে গবেষণায় জানা গেছে, গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি সারা বিশ্বে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণ হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, HMPV কোভিডের মতো নয় এবং এটি বহু বছর ধরেই রয়েছে। চীন এবং অন্যান্য দেশ শীতকালে HMPV-র স্বাভাবিক ঋতুভিত্তিক বৃদ্ধির মুখোমুখি হচ্ছে।
HMPV এমন একটি ভাইরাস যা সাধারণত সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। তবে কখনও কখনও এটি নিউমোনিয়া, অ্যাজমার অবস্থা খারাপ হওয়া, বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (COPD) আরও খারাপ করতে পারে। HMPV সংক্রমণ সাধারণত শীতকাল এবং বসন্তের শুরুর দিকে বেশি দেখা যায়।
বেশিরভাগ মানুষ ৫ বছর বয়সের আগেই HMPV দ্বারা আক্রান্ত হয়। আপনি দ্বিতীয়বারও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে প্রথমবারের সংক্রমণের পর উপসর্গ সাধারণত হালকা হয়ে থাকে।
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (HMPV) হলো এমন একটি ভাইরাস যা শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এটি বিশেষত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
HMPV-এর বেশিরভাগ উপসর্গ হালকা। এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
কাশি
নাক বন্ধ থাকা
নাক দিয়ে পানি পড়া
জ্বর
গলা ব্যথা
বমি বমি ভাব
বমি বা ডায়রিয়া
কিছু মানুষের জন্য HMPV গুরুতর হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
শ্বাসকষ্ট
অ্যাজমার অবস্থা খারাপ হওয়া
ক্লান্তি
ব্রঙ্কাইটিস
নিউমোনিয়া
৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
ভাইরাসটি মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে ছড়ায়। নিচের মাধ্যমে আপনি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন:
ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠে হাত দিলে
সেই হাত দিয়ে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর মাধ্যমে
হাত মেলানো বা ছোঁয়ার মাধ্যমে
HMPV দেহে প্রবেশ করার পর লক্ষণ দেখা দিতে ৩ থেকে ৬ দিন সময় লাগে।
যদিও যেকেউ HMPV পেতে পারে, নিচের গোষ্ঠীগুলি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ:
নবজাতক
৫ বছরের কম বয়সী শিশু
৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি
যারা অ্যাজমার জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করেন
যাদের দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (COPD) আছে
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল (যেমন ক্যান্সার বা এইচআইভি)
অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগী
এগুলো সাধারণত ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে এটি শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের সংক্রমণের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
হ্যাঁ, HMPV একটি সংক্রামক ভাইরাস, যা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে আপনি পেতে পারেন। এটি ঋতুভিত্তিক, অর্থাৎ শীত বা বসন্তের শুরুতে, বিশেষ করে ফ্লু মৌসুমের সময়, এটি বেশি দেখা যায়।
HMPV-এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গ নিজের থেকেই সেরে যায়। তবে দ্রুত সুস্থ হবার জন্য ডাক্তাররা নিচের পরামর্শ দিয়ে থাকেন :
জ্বর বা ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন করতে পারেন
নাক বন্ধ খুলতে ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন
বিশেষ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট কমাতে ইনহেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন
বিদ্রঃ অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের এর পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহন ঝুকিপূর্ণ হতে পারে।
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আপনি নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা
হাত ধোয়া
মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দেওয়া
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পৃষ্ঠে কম স্পর্শ করা
অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো, HMPV-ও শীত এবং বসন্তকালে সবচেয়ে সক্রিয় থাকে।
ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভাইরাসগুলো বেশি টিকে থাকে এবং মানুষের কাছাকাছি থাকার প্রবণতার কারণে এটি সহজে ছড়ায়।
উত্তর চীনে বর্তমানে নিম্ন তাপমাত্রার কারণে HMPV ছড়িয়ে পরছে। যা মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা। উত্তর গোলার্ধের অন্যান্য দেশেও HMPV বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) উত্তর গোলার্ধজুড়ে ফ্লু জাতীয় রোগের হার পর্যবেক্ষণ করছে এবং চীন বা অন্য কোথাও অস্বাভাবিক প্রাদুর্ভাবের কোনো রিপোর্ট পায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের মতো মহামারির ভয় অতিরঞ্জিত। HMPV একটি নতুন ভাইরাস নয়, এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান।
বিশ্বজুড়ে মানুষের "পূর্ববর্তী সংক্রমণের কারণে কিছুটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা" রয়েছে। প্রায় প্রতিটি শিশুই পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে অন্তত একবার HMPV-তে আক্রান্ত হয় এবং জীবদ্দশায় বারবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বৈশিষ্ট্য |
HMPV |
COVID-19 |
মানব মেটাপনিউমোভাইরাস (Human Metapneumovirus)। |
সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2)। | |
ভাইরাস পরিবারের নাম |
Pneumoviridae। |
Coronaviridae। |
লক্ষণসমূহ |
সাধারণ সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ: হাঁচি, কাশি, জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা। |
সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, স্বাদ ও গন্ধ হারানো, ক্লান্তি। |
সংক্রমণের ধরন |
ঋতুভিত্তিক (শীত ও বসন্তের শুরুতে বেশি হয়)। |
সারাবছর প্রাদুর্ভাব হতে পারে (ভ্যারিয়েন্টের উপর নির্ভর করে)। |
গুরুতর সমস্যা |
নিউমোনিয়া, অ্যাজমার অবস্থা খারাপ হওয়া, COPD খারাপ হওয়া। |
নিউমোনিয়া, মাল্টি-অরগ্যান ফেলিওর, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট। |
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী |
শিশুরা (বিশেষত ৫ বছরের কম), ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা। |
বয়স্ক ব্যক্তি, ক্রনিক রোগে ভুগছে এমন ব্যক্তিরা, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা। |
পরীক্ষার ধরন |
নাক বা গলার সোয়াব নিয়ে অ্যান্টিজেন বা PCR পরীক্ষা। |
নাক বা গলার সোয়াব, র্যাপিড অ্যান্টিজেন বা PCR পরীক্ষা। |
চিকিৎসা পদ্ধতি |
কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। উপসর্গ নিরাময়ের জন্য সাপোর্টিভ কেয়ার। |
কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (যেমন রেমডেসিভির), ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধ। |
প্রতিরোধ ব্যবস্থা |
হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, অসুস্থদের থেকে দূরে থাকা। |
ভ্যাকসিন গ্রহণ, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। |
ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা |
নেই। |
রয়েছে (যেমন Pfizer, Moderna, AstraZeneca)। |
মৃত্যুর হার |
খুবই কম (প্রধানত দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্নদের মধ্যে)। |
তুলনামূলক বেশি, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে। |
মানব মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা ছোট শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এর উপসর্গ সাধারণত হালকা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর হতে পারে। কোনো ভ্যাকসিন না থাকায় প্রতিরোধের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
Was this post helpful?
0
0