বাংলাদেশে খেজুরের দাম প্রকারভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত, নিম্নমানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে উচ্চমানের খেজুরের ক্ষেত্রে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
খেজুর একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা বাংলাদেশে রমজান মাসে ইফতারির পাশাপাশি সারা বছরই জনপ্রিয়।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে খেজুরের দাম, এর ধরন, গুণমান এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই গাইডে। এই আর্টিকেলটি আপনাকে খেজুর কেনার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
খেজুরের দাম তার ধরন, গুণমান এবং উৎসের উপর নির্ভর করে। নিচে কিছু জনপ্রিয় খেজুরের দাম উল্লেখ করা হলো:
|
খেজুরের ধরন |
উৎপত্তিস্থল |
প্রতি ১ কেজির দাম (টাকা) |
|
গলা বা বাংলা খেজুর |
বাংলাদেশ |
২০০ টাকা |
|
জাহেদি খেজুর |
ইরাক |
২৪০-২৫০ টাকা |
|
দাবাস খেজুর |
সৌদি আরব |
৩০০-৩৬০ টাকা |
|
বরই খেজুর |
ইরাক |
৪৪০-৫৪০ টাকা |
|
মেডজুল খেজুর |
মরক্কো |
১,২০০-১,৫০০ টাকা |
|
মাবরুম খেজুর |
সৌদি আরব |
৮০০-১,৭০০টাকা |
|
আজওয়া খেজুর ১ কেজি |
সৌদি আরব |
৯০০ -১৭০০ টাকা |
|
মরিয়ম খেজুর ১ কেজি |
সৌদি আরব |
১৪০০ -১৯০০ টাকা |
খেজুরের দাম বৃদ্ধির পেছনে শুল্ক ও কর বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং ঋণপত্র জটিলতা অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, শুল্ক না কমালে রমজান মাসে খেজুরের দাম আরও বাড়তে পারে।
২০২৫ সালে খেজুরের দাম বৃদ্ধির পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলো দায়ী হতে পারে:
শুল্ক ও কর বৃদ্ধি: আমদানি শুল্ক এবং কর বৃদ্ধির কারণে খেজুরের দাম বাড়তে পারে।
ডলার সংকট: ডলারের মূল্য বৃদ্ধি সরাসরি আমদানি পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে।
সরবরাহ জটিলতা: বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা বা পরিবহন খরচ বৃদ্ধি দামকে প্রভাবিত করতে পারে।
চাহিদা বৃদ্ধি: রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
খেজুরের গুণগত মান নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা আপনাকে সতেজ, সুস্বাদু এবং উচ্চমানের খেজুর নির্বাচন করতে সাহায্য করবে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়, এবং এগুলোর স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে। তবে প্রতিটি খেজুরই একটি স্বাস্থ্যকর ও মিষ্টি খাবার হিসেবে জনপ্রিয়।
খেজুরের নির্দিষ্ট ধরনের জন্য রঙের সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। খেজুরের রঙ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন হলুদ, সোনালি বাদামি, গাঢ় বাদামি, এমনকি কালো। কাঁচা খেজুর সাধারণত ফিকে হলুদ হয়, এবং পাকা খেজুর গাঢ় হলুদ থেকে কালো হতে পারে।
খেজুরের ত্বক মসৃণ বা সামান্য কুঁচকানো হতে পারে, যা এর ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। খেজুরের ত্বক পাতলা এবং মাংসল হওয়া উচিত, যা ফলের নরম অংশের সঙ্গে মিশে থাকে। অতিরিক্ত কুঁচকানো, শুকনো বা ফাঙ্গাসযুক্ত খেজুর কেনা এড়িয়ে চলুন।
তাজা খেজুর থেকে একটি মিষ্টি এবং মনোরম গন্ধ আসে। খেজুর থেকে টক বা পচা গন্ধ পাওয়া গেলে সেটি নষ্ট হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
খেজুর নরম এবং সামান্য আঠালো হওয়া উচিত। আঙুল দিয়ে চেপে দেখলে এর আর্দ্রতা অনুভূত হবে। এটি খুব বেশি শুকনো বা বেশি নরম এবং কাদামাটির মতো হলে সেটি নিম্নমানের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মজদুল খেজুর সাধারণত সফট হয়, যেখানে সাফাওয়ি খেজুর তুলনামূলক বেশি চিবানোর মতো।
খেজুরের স্বাদ নির্ভর করে এর ধরন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর। তবে ভালো মানের খেজুর প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি এবং সমৃদ্ধ স্বাদের হবে। কোনো ধরনের তেঁতো বা অপ্রীতিকর আফটারটেস্ট থাকলে সেটি নিম্নমানের হতে পারে।
বাংলাদেশে খেজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে রমজান মাসে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। দেশের খেজুরের বাজার মূলত আমদানির ওপর নির্ভরশীল, কারণ স্থানীয় উৎপাদন অপ্রতুল। সৌদি আরব, ইরান, তিউনিসিয়া, মরক্কো, এবং পাকিস্তান থেকে খেজুর আমদানি করা হয়। সৌদি আরবের আজওয়া, মাবরুম এবং সুক্কারি খেজুর উচ্চমানের জন্য পরিচিত, যেখানে ইরানের মাজাফাতি খেজুর সাশ্রয়ী মূল্যে বেশি জনপ্রিয়। মরক্কো থেকে আমদানি করা মজদুল এবং তিউনিসিয়ার ডেগলেট নূর খেজুরও বাজারে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
খেজুরের সরবরাহ সাধারণত চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখান থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পাইকারি বাজারে বিতরণ করা হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ দেশের প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র। এছাড়া সিলেট, রাজশাহী এবং খুলনার বড় বাজারগুলোতে খেজুর পাইকারি ও খুচরা দামে পাওয়া যায়।
রমজানের সময় খেজুরের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে উচ্চমানের খেজুর যেমন আজওয়া ও মজদুলের পাশাপাশি সাশ্রয়ী খেজুর যেমন মাজাফাতি এবং দাবাস বেশি বিক্রি হয়। সরকারের উদ্যোগে টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ন্যায্যমূল্যে খেজুর সরবরাহ করে।
খেজুরের বাজারে দাম নির্ধারণ হয় এর উৎস, মান এবং সরবরাহের ভিত্তিতে। ভালো মানের খেজুর কেনার জন্য বিশ্বস্ত উৎস থেকে কেনা গুরুত্বপূর্ণ। পাইকারি বাজারে দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও খুচরা বাজারে তা কিছুটা বেশি হয়।
১. মধ্যপ্রাচ্য: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইরাক থেকে বাংলাদেশে বৃহৎ পরিমাণে খেজুর আমদানি করা হয়। সৌদি আরবের আজওয়া এবং সুক্কারি , মরিয়ম খেজুর বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
২. উত্তর আফ্রিকা: তিউনিসিয়া এবং মরক্কো থেকে ডেগলেট নূর এবং মজদুল খেজুর আমদানি করা হয়, যা উচ্চমানের এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
৩. ইরান:ইরানি মাজাফাতি কাবকা, এবং খুরমা খেজুর বাংলাদেশে সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য আমদানি পণ্য।
৪. দক্ষিণ এশিয়া: পাকিস্তান থেকে বরই জাতীয় খেজুর আমদানি হয়, যা স্থানীয় বাজারে মধ্যবিত্তের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
মন্তব্য
বাংলাদেশে খেজুরের চাহিদা রমজান মাসে অত্যন্ত বেড়ে যায়, কারণ এটি ইফতারের অন্যতম প্রধান উপাদান। প্রতি বছর এই সময়ে খেজুরের আমদানি ও বিক্রয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেজুরের মূল্যবৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক। আমদানি খরচ, মুদ্রার বিনিময় হার, শুল্ক ও কর বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালেও খেজুরের দাম আরও বাড়তে পারে।
খেজুর কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করলে ভালো মানের খেজুর সঠিক দামে পাওয়া সম্ভব হবে এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকেও সুরক্ষিত থাকা যাবে।
FAQ
বলা হয়ে থাকে এটি মদিনা শরিফের সর্বোত্তম খেজুর। হযরত মোহাম্মদ (সা.) ইফতার করতেন এই খেজুর দিয়ে। দেখতে কালো, বিচি ছোট এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু
দেখতে অনেক লম্বা এবং মোটা হয়ে থাকে। খেতে নরম এবং প্রচুর মিষ্টি হয়ে থাকে। মেডজুল খেজুরে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং আইরন থাকে।
শুকনো খেজুর পলিফেনল সমৃদ্ধ। এই যৌগগুলি বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে, যেমন হজমশক্তি উন্নত করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা এবং এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা ।
প্রোস্টেট স্বাস্থ্য: নিয়মিত খেজুর সেবন প্রোস্টেট স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমাতে পারে । বিশ্বাস করা হয় যে খেজুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য জৈব সক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি প্রোস্টেট কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
Was this post helpful?0
0