শীতকাল আমাদের শরীরের জন্য নানা পরিবর্তন নিয়ে আসে। ঠান্ডা আবহাওয়া, কম আর্দ্রতা এবং ত্বকের সুরক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে ঠোঁটের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফাটতে শুরু করে।
অনেকেরই ঠোঁটের ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও, এটি নানা কারণে হতে পারে। এই সমস্যাটি শীতকালে আরো তীব্র হয়ে ওঠে, যখন ঠান্ডা বাতাস এবং উত্তপ্ত পরিবেশ ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেন। ফলে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ এবং ফাটতে থাকে। এই লেখায় আমরা ঠোঁট ফাটার কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়সহ নানাদিক বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষত শীতকালে। তবে এর পিছনে নানা শারীরিক ও পরিবেশগত কারণ থাকতে পারে। নিচে ঠোঁট ফাটার কিছু প্রধান কারণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
শুষ্ক আবহাওয়া: শীতকালে ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক বাতাস ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয়, ফলে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ঠোঁটের ত্বক ফাটতে পারে।
ঘরোয়া উষ্ণতা: শীতকালে ঘরের ভিতরও অত্যধিক গরম হতে পারে, বিশেষত যখন হিটার বা এসি চালানো হয়। এই উষ্ণতা ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয় এবং ঠোঁটকে শুষ্ক করে তোলে, যার ফলে ঠোঁট ফাটা শুরু হয়।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া এবং ভিটামিন এ, বি, সি বা ই-এর অভাব শরীরের আর্দ্রতা ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয় না। এই পুষ্টির অভাবে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে।
মাউথ ব্রিদিং: অনেক সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার জন্য মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া (মাউথ ব্রিদিং) ঠোঁটের শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষত সর্দি বা শ্বাসজনিত সমস্যায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
এলার্জি বা সংক্রমণ: কিছু খাবার বা প্রসাধনী (যেমন ঠোঁটের বাম বা লিপস্টিক) এলার্জির কারণ হতে পারে, যা ঠোঁট ফাটার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনো কখনো ঠোঁটের উপর জীবাণুর সংক্রমণও ফাটা বা রক্তাক্তর কারণ হতে পারে।
মেন্থল বা ক্যামফোরযুক্ত লিপ বাম: অনেক লিপ বাম মেন্থল বা ক্যামফোরের মতো উপাদান ধারণ করে যা ঠোঁটের শুষ্কতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব উপাদান ঠোঁটে একটি শীতল অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ঠোঁটের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে ঠোঁট ফাটাতে কাজ করে।
সানবার্ন বা অতিরিক্ত সূর্যের আলো: সূর্যের UV রশ্মি ঠোঁটের ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে, বিশেষত যখন দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে থাকেন। অতিরিক্ত সূর্যের তাপ এবং UV রশ্মি ঠোঁটের ত্বকে ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।
লিপ লিকিং অভ্যাস: অনেক মানুষ ঠোঁটের ফাটল বা শুষ্কতা কমানোর জন্য নিজের ঠোঁট মৃদু ভাবে চেটে ফেলেন, তবে এটি ফাটার সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে। এটি ঠোঁটের উপর মাইক্রোস্কোপিক ক্ষতি করে এবং শুষ্কতার মাত্রা বাড়ায়।
ঠোঁট ফাটা সাধারণত শুষ্কতা, আর্দ্রতার অভাব এবং বাহ্যিক পরিবেশের কারণে হতে পারে। ঠোঁট ফাটার লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং পরবর্তীতে আরো গুরুতর হতে পারে যদি সঠিক যত্ন নেওয়া না হয়। ঠোঁট ফাটার কিছু সাধারণ লক্ষণ জেনে নিন:
শুষ্কতা
রুক্ষতা
ফাটা এবং রক্তপাত
ব্যথা এবং অস্বস্তি
লালচে বা সাদা দাগ
ফেটে গিয়ে স্যাঁতসেঁতে হওয়া
স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা
টানটান অনুভূতি
ঠোঁট ফাটা সাধারণত শুষ্কতা, আর্দ্রতার অভাব এবং ভুল যত্নের কারণে হয়। ঠোঁটের ত্বক খুব সেনসিটিভ এবং যখন এর আর্দ্রতা কমে যায়, তখন সহজেই ফেটে যেতে পারে। ঠোঁট ফাটা রোধ করতে এবং দ্রুতই আরাম পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। চলুন জানি ঠোঁট ফাটা কমানোর কয়েকটি সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া উপায়-
নারিকেল তেল ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে। এতে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজিং উপাদান রয়েছে যা ঠোঁটের শুষ্ক ত্বককে মোলায়েম করে। এই তেল ব্যবহারে ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ফাটা ঠোঁট দ্রুত সেরে ওঠে। অল্প নারিকেল তেল হাতে নিয়ে ঠোঁটে মৃদুভাবে ম্যাসাজ করুন। রাতে শোয়ার আগে এটি লাগালে তা সারা রাত কাজ করে।
মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণও রয়েছে, যা ঠোঁটের ফাটা স্থানে সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। মধু ঠোঁটের শুষ্কতা কমায় এবং ত্বককে মসৃণ করে। এক চামচ মধু সরাসরি ঠোঁটে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর হবে।
অ্যালোভেরা ত্বকের শুষ্কতা ও ফাটা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি ঠোঁটের ফাটা অংশে আর্দ্রতা যোগায় এবং ত্বককে নরম করে। তাছাড়া, অ্যালোভেরা ঠোঁটের ক্ষতও দ্রুত সারিয়ে তোলে। এক টুকরা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে তা ঠোঁটে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার ঠোঁটকে নরম রাখবে।
গোলাপজল ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে এবং গ্লিসারিন ত্বককে মোলায়েম এবং আর্দ্র রাখে। এই দুটি উপাদান ঠোঁটের ফাটা স্থানে দ্রুত কাজ করে। গোলাপজল ও গ্লিসারিন সমপরিমাণ মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখবে।
অলিভ অয়েল ঠোঁটের শুষ্কতা কমাতে এবং ত্বকের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন E ঠোঁটের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অলিভ অয়েল ঠোঁটে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর মুছে ফেলুন। এটি ঠোঁটকে মোলায়েম এবং আর্দ্র রাখবে।
ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। শরীরের অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে পানি অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ঠোঁটের ত্বক আর্দ্র থাকে এবং ফাটা কমে।
ভিটামিন ই ঠোঁটের শুষ্কতা ও ক্ষত সারাতে খুব উপকারী। এটি ত্বককে মোলায়েম রাখে এবং নতুন ত্বক গঠনে সাহায্য করে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ফাটিয়ে তার ভেতরের তেল ঠোঁটে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঠোঁটকে দ্রুত সেরে ওঠতে সাহায্য করবে।
শুধু ঠোঁটের জন্য নয়, সাধারণ ময়েশ্চারাইজারও ঠোঁটের শুষ্কতা কমাতে সহায়ক। ময়েশ্চারাইজার ঠোঁটের শুষ্ক ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এবং ঠোঁটকে মসৃণ করে। ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে রাখুন এবং এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে।
ভিটামিন এ ও সি ঠোঁটের ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এগুলো ঠোঁটের শুষ্কতা এবং ফাটা দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর, টমেটো, সাইট্রাস ফল ইত্যাদি খান।
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা, তবে অনেক সময় এটি গুরুতর সমস্যার ফল হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি দীর্ঘমেয়াদী হয়ে ওঠে বা সঠিকভাবে সেরে না ওঠে। ঠোঁটের ফাটা এবং শুষ্কতা যদি প্রাকৃতিক উপায়ে কমে না আসে, তবে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এখানে ঠোঁট ফাটা চিকিৎসার কিছু পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
ঠোঁটের ফাটার কারণে যদি সংক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক সাধারণত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম বা মলম প্রেস্ক্রাইব করেন। এই ক্রিমগুলি ফাটার জায়গায় সংক্রমণ রোধ করে এবং দ্রুত সেরে ওঠায় সহায়তা করে।
ভিটামিন ই এবং এ ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং শুষ্কতা কমাতে খুবই কার্যকর। চিকিৎসকরা ভিটামিন ই বা এ সমৃদ্ধ মলম ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন, যা ঠোঁটের ক্ষত ও ফাটার জায়গায় ত্বক পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে।
যদি ঠোঁটের ফাটা স্থায়ী সমস্যা হয়ে থাকে, বিশেষ করে যদি এটি আক্রমণাত্মক বা পুনরাবৃত্তি হয়, তবে চিকিৎসকরা রেটিনয়েড ক্রিম প্রেসক্রাইব করতে পারেন। রেটিনয়েড ত্বকের কোষের পুনর্গঠন এবং সেলুলার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে, এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি অনেক সময় ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক বা সংবেদনশীল করে ফেলতে পারে।
ঠোঁটের ভিতরে ফাটা বা ক্ষত হয়ে থাকলে, মাউথ ওয়াশ বা অ্যান্টিসেপটিক দ্রব্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সঠিকভাবে ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্য করে এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে ওঠতে সহায়তা করে।
যদি ঠোঁটের ফাটা কোনো অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক অ্যালার্জি প্রতিরোধী ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এই ধরনের চিকিৎসা ঠোঁটের ফাটা দূর করতে সহায়তা করে এবং অ্যালার্জির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা শুষ্কতা, ঠান্ডা আবহাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানির অভাবের কারণে হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ঠোঁট ফাটলে ত্বকের ক্ষতি, ব্যথা এবং ইনফেকশনও হতে পারে। তবে কিছু সহজ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। নিচে ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধের কিছু কার্যকর উপায় দেওয়া হলো:
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ঠোঁটের ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন
ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
ঠোঁটের চামড়া তোলা থেকে বিরত থাকুন
ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঠোঁটের যত্ন নিন
অ্যালার্জি বা সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
পুষ্টিকর খাবার খান
ঠোঁটের ত্বককে মৃদু হাতে পরিষ্কার করুন
ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন।
ঠোঁট ফাটলে সাধারণত তীব্র ব্যথা, অস্বস্তি এবং শুষ্কতা হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা বা ইনফেকশনের কারণে হতে পারে। সুতরাং, যখন ঠোঁট ফাটা সাদামাটা সমস্যা হয়ে ওঠে না এবং গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তখন তা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময় হতে পারে। এখানে কিছু বিশেষ পরিস্থিতি দেওয়া হলো যখন ঠোঁট ফাটলে আপনাকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-
দীর্ঘ সময় যাবত ফাটা ঠোঁট থাকলে
ফাটা ঠোঁটের সাথে ইনফেকশন দেখা দিলে
ঠোঁটের ফাটা যদি অন্যান্য শরীরিক লক্ষণের সাথে যুক্ত থাকে
ঠোঁট ফাটা এবং ঠোঁটের ত্বক খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে
ফাটা ঠোঁটে যদি কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে
যদি ঠোঁটের ফাটা গর্ভাবস্থায় ঘটে
ঠোঁটের ফাটা যদি খাবার বা পানীয়ের প্রতি অ্যালার্জির কারণে হয়
ঠোঁটের ফাটার কারণে ঘুম বা দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হলে।
সঠিক যত্ন ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ঠোঁট ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, পানি পানে সচেতনতা, এবং ত্বকের প্রতি যত্নশীল হলে ঠোঁটকে শীতে নরম ও সুস্থ রাখা যায়। তাই, ঠোঁটের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে শীতের শুরু থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
FAQ
ঠোঁটের ত্বক অন্যান্য ত্বকের তুলনায় খুবই পাতলা এবং এতে তেলগ্রন্থি থাকে না। ফলে এটি প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চার ধরে রাখতে পারে না। এছাড়া শীতকালে আর্দ্রতার অভাব, শুষ্ক বাতাস, এবং ঠোঁট বারবার চাটার অভ্যাস ঠোঁটের আর্দ্রতা আরো কমিয়ে দেয়। এসব কারণেই ঠোঁট দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় এবং ফাটার ঝুঁকি বাড়ে।
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে, যা ঠোঁটের সংবেদনশীল ত্বক থেকে দ্রুত আর্দ্রতা শুষে নেয়। এছাড়া, শীতের শুষ্ক বাতাস, ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং ঘরের ভিতরের গরম বাতাস ঠোঁটকে আরো বেশি শুষ্ক করে তোলে। অনেক সময় ঠোঁট চাটার অভ্যাস বা পর্যাপ্ত লিপ বাম ব্যবহার না করাও ঠোঁট ফাটার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঠোঁট ফেটে রক্তপাত হলে প্রথমে ঠোঁট পরিষ্কার ও শুকনো কাপড় বা তুলা দিয়ে আলতোভাবে রক্ত পরিষ্কার করুন। এরপর অ্যান্টিসেপটিক মলম ব্যবহার করুন যাতে সংক্রমণ না হয়। ঠোঁট ময়েশ্চারাইজ করার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি বা ময়েশ্চারাইজারযুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করুন। শুষ্ক ও ফাটা অংশ খোঁটাখুঁটি বা টেনে ছাড়াবেন না, এতে ক্ষত আরো বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং ঠোঁট চাটার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন।
শিশুদের ঠোঁট ফাটলে তাদের সংবেদনশীল ত্বকের জন্য অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন। প্রথমে শিশুর ঠোঁট ধীরে ধীরে পরিষ্কার করুন এবং একটি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত, ক্ষতিকারক রাসায়নিকমুক্ত লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। ঠোঁট ফাটার প্রধান কারণ হিসেবে শুষ্কতা দেখা যায়, তাই শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করান। বাড়ির ভিতরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। শিশুর ঠোঁট চাটার প্রবণতা থাকলে তা বন্ধ করার চেষ্টা করুন এবং বেশি শুষ্ক বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাইরে যাওয়ার সময় তাদের ঠোঁটে সুরক্ষামূলক প্রলেপ দিন।
ঠোঁট ফাটার পাশাপাশি জ্বালা হলে প্রথমেই ঠোঁট পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। ঠোঁটের ত্বকে যেন কোনো ধুলাবালি বা জীবাণু জমে না থাকে তা নিশ্চিত করুন। জ্বালা কমানোর জন্য ঠোঁটে ঠান্ডা পানি বা বরফের টুকরা আলতোভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। এরপর একটি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত এবং প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরা জেল বা মধু ঠোঁটের জ্বালা কমাতে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সহায়ক হতে পারে। ঠোঁট চাটার অভ্যাস বা মসলা ও লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো জ্বালা বাড়াতে পারে।
ঠোঁট ফাটার একটি সাধারণ কারণ হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব, বিশেষত ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) ও ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)। এছাড়া, ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এবং ভিটামিন বি১২ এর অভাবও ঠোঁট শুষ্ক ও ফাটার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ভিটামিনগুলোর অভাবে ঠোঁটে শুষ্কতা, লালচে ভাব, এবং কোণের অংশে ব্যথা বা ফাটা দেখা দিতে পারে। ঠোঁটের স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাবার, যেমন শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ, বাদাম, এবং দানাশস্য খাওয়া জরুরি। ভিটামিন অভাবের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
Was this post helpful?
0
0